Friday 7 October 2016

সাবধান : ফেসবুক লিংকে ক্লিক করার আগে ভাবুন

একজন নামকরা ব্যক্তির ছবি সম্বলিত
একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে মনিকার (ছদ্মনাম) কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। মনিকা যথারীতি তা গ্রহণ করে।
কিছুক্ষণ পর মনিকার ইনবক্সে একটি ইমেজ ফাইল আসে। সাথে মেসেজে লেখা ‘হাই মনিকা, দেখতো এটা তোমার ছবি না?’ মনিকা ক্লিক করে দেখে ফাইলটিতে কিছুই নেই।
প্রতিউত্তরে মনিকা ওই লোকটিকে কিছু না পাওয়ার কথা জানালে লোকটি উত্তর দেয় ‘না, ফাজলামো করলাম।’ এরপর মনিকা লোকটিকে হাজার বার মেসেজ পাঠিয়েও প্রতিউত্তর পায় না। পাবে বা কি করে? ইনবক্সে আসা ইমেজ ফাইলটি ক্লিক করার পর পরই তো মনিকার ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে ওই লোকটি। সে এখন মনিকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঘাটছে আর সুযোগ খুঁজছে কি উপায়ে লাভবান হওয়া যায়।


মেসেজ ইনবক্সে আসা ইমেজ ফাইলটি আসলে ইমেজ ফাইল নয়, ওটা হ্যাকারের একটি টুল। এটা হ্যাকিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের টুল। ওই ফাইলটিতে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে অপরপাশের কম্পিউটার দখলে নেয় হ্যাকার।
তাই অপরিচিত কোনো ব্যক্তির দেওয়া কোনো ইমেজ কিংবা ভিডিও ফাইলে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি ফেসবুকে হ্যাকাররা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকের ইনবক্সে বিভিন্ন ধরণের ফাইল আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভিডিও ফাইলের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ওই ফাইলে ক্লিক করা মাত্রই আপনার ফেসবুকের যাবতীয় তথ্য হ্যাকার পেয়ে যাবে।
এরপর হ্যাকার আপনার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে আজেবাজে ছবি, ভিডিও পাঠিয়ে আপনার ইমেজ নস্ট করবে, কোনো হ্যাকার (দেশীয়) আপনার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে টাকা চাইবে, কেউবা আপনার কম্পিউটারের পুরো দখলদারিত্ব নিয়ে যাবতীয় তথ্য চুরি করে আপনার দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।
গত কয়েকদিনে ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে এমন অসংখ্য খবর নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও প্রচার প্রচারণা চলছে।
অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।
এ বিষয়ে কথা হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘গ্রে হ্যাকার’ দলের এক সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, ফেসবুকের ইনবক্সে কোনো ফাইল পাঠানোর মাধ্যমে হ্যাকার আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। ফলে কম্পিউটারে থাকা যাবতীয় তথ্য তারা চুক্তি করতে পারে। এ শ্রেণির হ্যাকাররা সাধারণত: পেশাদার।
আরেক শ্রেণির হ্যাকার আছেন যারা আপনার একাউন্টের দখল নিয়ে আজেবাজে ভিডিও কিংবা ইমেজ ফাইল আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবে।
এটারও একটা ব্যবসায়িক দিক আছে। আর স্থানীয় নবীন হ্যাকারদের অনেকে আপনার ঘনিষ্টজনদের কাছে টাকা চাইতে পারে বা অন্য কোনোভাবে সুবিধা নিতে পারে।
কয়েকদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়। তারপর সেই শিক্ষিকার একাউন্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এক সহকর্মীর কাছে ৮০ হাজার টাকা চাওয়া হয় বিপদের কথা জানিয়ে। শিক্ষক বিষয়টি বুঝতে পেরে অন্যদের অবহিত করেন।
বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের এক কর্মকর্তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়ার পর এই প্রতিবেদকের কাছেও ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরে সুদানে কর্মরত ব্র্যাকের ওই কর্মকর্তা তার বিড়ম্বনার কথা জানান।
বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছিল এবং কাউকে কাউকে বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ফেসবুকের একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে ফেসবুকেই চলছে প্রচার প্রচারণা। অনেকে পোস্ট দিয়ে অন্যদের সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
হ্যাকারদের কাছ থেকে ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ‘গ্রে হ্যাকার’ দলের ওই সদস্য বলেন, বিভিন্নরকম নান্দনিক পেজ থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসলে সেগুলো যাচাই করা ভালো। এ ছাড়া ফেসবুক থেকে কোনো এডাল্ট সাইটে প্রবেশ করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। অপরিচিত
কারো শেয়ার করা ভিডিও লিংকে ক্লিক করা থেকে দূরে থাকতে হবে। আর পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈচিত্র রাখা জরুরি। বিশেষ করে পাসওয়ার্ড দীর্ঘ হওয়া ভালো। এক্ষেত্রে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষরের সমন্বয়, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন যেমন- হ্যাশ, ডলার ইত্যাদি থাকা নিরাপদ।
পাবলিক বাসে কিংবা ট্রেনে যাত্রীদের উদ্দেশে যে লেখাটি সবার নজরে পড়ে তা হলো ‘অপরিচিত লোকের দেওয়া কিছু খাবেন না’।ফেসবুকের ক্ষেত্রেও তাই ‘অপরিচিত লোকের দেওয়া ফাইলে ক্লিক করবেন না’।
উল্লেখ্য, পেশাদার হ্যাকার দুই ধরণের হয়। যারা সাদা মুখোশ পড়ে দর্শন দেন তারা ভালো কাজের জন্য হ্যাকিং করেন আর যারা কালো মুখোশ পড়েন তারা অপরাধমূলক কাজের জন্য হ্যাকিং করেন।

No comments:

Post a Comment